আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো এবছরের বিশ্ব ইজতেমা

ঢাকা: দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে লাখ লাখ মুসল্লি ছুটে যায় তঙ্গীর তুরাগ তীরে। মোনাজাতের সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখতির হয়ে ওঠে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। অনেকে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন।
রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তুরাগতীরে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।
এর আগে বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন। আর হেদায়তি বয়ান করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। তাদের বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।
আখেরি মোনাজাতে ঈমানি জিন্দেগী, ঈমানি মৃত্যু, উত্তম আখলাক, ঈমানি হাকিকত বুঝার তৌফিক, অন্তরে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত সৃষ্টি, সারা জীবনের গোনাহ মুক্তি, উত্তম রিজিক, দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি, পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, ঈমানি ভ্রাতৃত্ব মজবুত করা ও সারা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ চাওয়া হয়।
মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী প্রথমে সুরা আলে ইমরান থেকে তেলাওয়াত করেন। দয়াময় আল্লাহর নামে হামদ পাঠ করেন। মোনাজাতে তিনি সারা দুনিয়ার মুসলমানদের জান-মাল আর সময়কে আল্লাহর জন্য কবুল, জাহান্নামের ভয়ানক আগুন আর পুলসিরাতের কঠিন পথ মুক্তি এবং মুসলিমদের হকের ওপর অটুট রাখা এবং বাতিল শক্তিকে পরাজিত করার আর্জি জানান।
কবরবাসী সকল মুমিন নারী-পুরুষকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান, দ্বীনের জন্য যারা মেহনত করছেন তাদের জান-মাল আর সময় কবুল করে তাদের সম্মান বৃদ্ধি, সাহাবিদের মতো ঈমান, ঈমানি শক্তি, ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর সম্প্রতির দোয়া করেন তিনি।
দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্ম ঈমানের সঙ্গে করার, রাগকে খতম, নাফরমানিকে শেষ করে দিয়ে ঈমানের প্রতি আগ্রহ পয়দা করার বিশেষ আর্জি করা হয় মোনাজাতে। ধ্যানের সাথে নামাজ কায়েম, নামাজের মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান আর অন্তরকে স্রেফ আল্লাহর দিকে মুতাওয়াজ্জা করার তাওফিক চাওয়া হয়।
বিশ্ব মুসলমানদের জানমালের হেফাজত, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে ঈমানদার মুসলমানদের রক্ষা, বাতিল শক্তির সমস্ত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে উৎখাত করার মালিক আল্লাহ। হকের রাজ প্রতিষ্ঠা ও বাতিল শক্তিকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিতে আল্লাহর কাছে বিশেষ সাহায্য কামনা করা হয়। মোনাজাতে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়।
এর আগে প্রথম পর্বের ইজতেমা হয় ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ওই পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার শেষ দিনের কার্যক্রম শুরু হয় বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে। বয়ান চলে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। খাবারের বিরতি শেষে শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। এরপর শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।
১৯৬১ সাল থেকে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের আয়োজনে ইজতেমা হয়ে আসছে। ২০১৮ সালে তাবলিগের বর্তমান আমির ভারতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে মানা না-মানাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। ওই বছর ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে এসে বিরোধের মুখে ফিরে যান তিনি।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিরোধে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তুরাগ ময়দানে সংঘর্ষে নিহত হন এক মুসল্লি। এরপর ২০১৯ সাল থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমা করে আসছে।